স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শিশুর জন্মের বিষয়ে জোর দিচ্ছে ফেনীতে স্বাভাবিক প্রসব বেড়েছে
নিজস্ব প্রতিনিধি
সিজারিয়ান নয় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শিশুর জন্মের বিষয়ে জোর দিচ্ছে ফেনী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলাজুড়ে সিজারিয়ান শিশুর জন্মের প্রবণতা বেশি থাকলেও গত প্রায় এক বছর ধরে হিসাব এর ব্যতিক্রম। জেলার সরকারী হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শিশুর জন্মের হার বেড়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, মানুষ হাসপাতালে না গিয়ে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করতেন। কিন্তু সম্প্রতি বছরগুলোতে একদিকে বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর বাণিজ্যিক কারণে অন্যদিকে প্রসব যন্ত্রণা সইতে না পারার ভয়ে সিজারে সন্তান প্রসবের হার বেড়েছে। এতে সাধারণ মানুষও সরকারী হাসপাতালের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বেসরকারী হাসপাতালমুখী হয়। স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালানোয় সরকারী হাসপাতালে যেতে শুরু করেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় গত ১০ মাসে ৬ হাজার ১শ ৭৭টি প্রসূতি শিশু জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৫শ ২৩ জনের নরমাল ডেলিভারী হয়েছে। শুধুমাত্র ৬৫৪ জন প্রসূতির সিজার হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাসে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ৪৫৮ জনের নরমাল ডেলিভারী হয়েছে। সিজারিয়ান হয়েছে ১শ প্রসূতির। জেলার বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতাল ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৩শ ৫ জন প্রসূতির নরমাল ডেলিভারী ও ৫ জন সিজারিয়ান অপারেশন হচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাসে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ৩৮৬ জনের নরমাল ডেলিভারী ও ৮৩ জনের সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতাল ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২৪৪ জনের ডেলিভারী হয়েছে। এর মধ্যে একজনের সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে। আগস্ট মাসে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ৬৫৮ জনের নরমাল ডেলিভারী ও ৭৮ জনের সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতাল ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২শ ৮ জনের সবারই নরমাল ডেলিভারী হয়েছে। জুলাই মাসে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ২৯৮ জনের নরমাল ডেলিভারী ও ৭৭ জনের সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতাল ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২২০ জন প্রসূতির সবার নরমাল ডেলিভারী হয়েছে। জুন মাসে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ১শ ৮১ জনের নরমাল ডেলিভারী ও ৪৫ জনের সিজার হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতাল ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২শ ৪ জন প্রসূতির সবার নরমাল ডেলিভারী হয়েছে। মে মাসে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ২শ ৫৪ জনের নরমাল ডেলিভারী ও ৫৪ জনের সিজার হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতাল ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২শ ৫৩ জনের নরমাল ডেলিভারী হয়েছে। এপ্রিল মাসে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ২শ ১৫ জনের নরমাল ডেলিভারী ও ৬১ জনের সিজার হয়েছে। জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২শ ৩৭ জন প্রসূতির সবার নরমাল ডেলিভারী হয়েছে। মার্চ মাসে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ২শ ৭৮ জনের নরমাল ডেলিভারী ও ৭৪ জনের সিজার হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতাল ও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২শ ৪০ জন প্রসূতি সবার নরমাল ডেলিভারী হয়েছে। ফেব্রুয়ারী মাসে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ২শ ৯১ জনের নরমাল ডেলিভারী ও ৬৫ জনের সিজার হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতাল ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২শ ৯ জনের নরমাল ডেলিভারী হয়েছে। জানুয়ারী মাসে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ৩শ ৫০ জনের নরমাল ডেলিভারী ও ৮৯ জনের সিজার হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতাল ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২শ ৩৭ জন প্রসূতির নরমাল ডেলিভারী হয়েছে।
সূত্র জানায়, পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সুবার বাজারে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ‘মির্জানগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে’ গর্ভকালীন নারীদের প্রসব সেবা শুরু হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এবং পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উদোগে মামনি এমএলটিএস প্রকল্পের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য বিভাগের মিডওয়াইফ রহিমা বেগম ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পরিদর্শক ফরিদা আক্তার প্রসব সেবা দিয়ে আসছেন। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভুট্টু পরিষদের পক্ষ থেকে উন্নয়ন কাজের জন্য ৩ লাখ টাকা অনুদান সহায়তা দিয়েছেন। অক্টোবর মাস পর্যন্ত এখানে ২ হাজার ৭০ জনের প্রসব হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে এখানে গর্ভকালীন সেবা নিয়েছেন ১শ ৩শ ৮০ জন। প্রসব-পরবর্তী সেবা নিয়েছেন ১ হাজার ৭২ জন নারী।
মির্জানগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মিডওয়াইফ রহিমা বেগম জানান, এখানে সবধরনের অন্ত:স্বত্তা রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এ কেন্দ্রে প্রতি মাসে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ জন নারীর স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। প্রয়োজনীয় ঔষুধপত্রও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয়। গত শনিবার একইদিন চারজন অন্ত:স্বত্ত্বা নারীর স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে।
মামনি প্রকল্পের উপজেলা কো-অর্ডিনেটর আলতাফ হোসেন জানান, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিতে সেবার মান বাড়াতে তিনি কাজ করছেন। প্রকল্প থেকে নিরাপদ ডেলিভারী উপকরণ প্রদান করা হয়।
পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আবদুল খালেক মামুন জানান, মা ও নবজাতকের মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ সেবা চালু করা হয়। সরকারী হাসপাতালে গর্ভবর্তী নারীদের সেবায় কোন টাকা-পয়সা খরচ হয়না। নিরাপদ প্রসবের জন্য তারাও হাসপাতালে আসেন।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা: মীর মোবারক হোসাইন দিগন্ত বলেন, মা ও শিশুস্বাস্থ্য, প্রসব এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় কেন্দ্রটি নিরলসভাবে কাজ করছে। ফলে সরকারী হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।