লেডি বাইকার ফারহানা নববধূ নয়, বিয়ে হয়েছে ৩ বছর আগে, আছে সন্তানও!
নিজস্ব প্রতিবেদক
সর্বশেষ আপডেট: আগস্ট ২৬, ২০২০
২:৫৭: অপরাহ্ণ
গায়ে হলুদের আয়োজনে মোটরবাইক শোভাযাত্রা, চালকের আসনে কনে নিজেই। সেই দৃশ্য এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। বাঙালি কনের এমন কাণ্ডে দেশে-বিদেশে রীতিমত আলোড়ন। মাত্র কয়েকদিনে ভিডিওটি দেখেছেন কোটির ওপরে মানুষ।
তবে করোনাভাইরাস মহামারীকালে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা এবং ট্রাফিক আইন না মেনে তার এই চলার সমালোচনা যেমন হচ্ছে। আবার একটি মফস্বল শহরে এভাবে চলাচলে তার সাহসের প্রশংসাও হচ্ছে।
এদিকে গায়ে হলুদের দিন শহরময় বাইক র্যালি করে ভাইরাল হওয়া যশোরের ফারহানকে গণমাধ্যমে ‘নববধূ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তিনি নববধূ নন। সম্প্রতি তিনি বিয়েও করেননি। তার বিয়ে হয়েছে আরও তিন বছর আগে। দেড় মাস আগে তার কোলজুড়ে এসেছে এক ছেলে সন্তানও।
গত ১৪ আগস্ট গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হওয়ায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। ফারহানা নিজেও গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টি পরিস্কার না করায় বিভ্রান্তি বাড়ে। ১৩ আগস্টে সাজগোজ ও অনুষ্ঠানের বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ঢাকাতে দেখেছি, অনেক বিয়েতে বর নিজে মোটরসাইকেল চালিয়ে বন্ধুবান্ধব নিয়ে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে যান। আমি মোটরসাইকেল চালাতে পারি। আমারও ইচ্ছে হয়েছে। আমি ইচ্ছেপূরণ করেছি। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে একটু হইচই-আনন্দ করেছি।’
ফারহানার এ বক্তব্যে অন্যদের মতো করে বিয়ে করার ইচ্ছার কথা জানানোয় তাকে ‘নববধূ’ হিসেবে গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে তিনি নববধূ নন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফারাহানার ঘনিষ্ঠজনরা।
স্বজনরা জানিয়েছেন, বিয়ের অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণ করতে না পারায় ছেলে জন্মের পর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আর সে অনুষ্ঠানকে ঘিরেই শখ পূরণ করেন এই লেডি বাইকার।
তবে তার এ কাজকে ভালোভাবেই দেখছেন বন্ধু ও প্রতিবেশীরা। তাদের দাবি ফারহানা স্বাধীনচেতা মানুষ। কিন্তু নেটিজেনরা তার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছেন।
ফারহানা আফরোজের এক চাচা শাকুর মাহমুদ শোভন জানান, ২০১৭ সালে ঢাকায় পাবনার কাশিনাথপুরের বাসিন্দা ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হাসনাইন রাফির সঙ্গে ফারহানার আক্দ হয়। এরপর থেকে এ দম্পতি ঢাকাতেই থাকে।
তিনি বলেন, বিয়ের সময় কোনো জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান না করতে পারার আফসোস ছিল ফারাহানার মধ্যে। গত জুন মাসে তার একটি ছেলে সন্তান হয়েছে। গত ১৩ আগস্ট বাড়িতে তার বিবাহোত্তর ও সন্তান হওয়াকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নবজাতককে নেওয়ার জন্য তার স্বামীসহ শ্বশুরালয়ের লোকেরা ওই দিন যশোরে আসেন।’
ফারহানার চাচা বলেন, এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে শহরের পোস্ট অফিস পাড়ার একটি বিউটি পার্লার থেকে সেজে ফারহানা বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেল চালিয়ে শহরের ঈদগাহ মোড় হয়ে সার্কিট হাউসের সামনে দিয়ে নিজের বাড়িতে যায়।
ফারহানার বান্ধবী নওরীন মোক্তাকি জয়া বলেন, ‘যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ফারহানার সাথে আমার বন্ধুত্ব। ফারহানা খুব ভালো মনের মানুষ, মিশুক এবং সেলফ ডিপেন্ডেডেন্ট। সবার উপকার করে। যেহেতু ও (ফারহানা) বাইক চালাতে পারে তাই শখ ছিল নিজের বিয়েতে বাইক রাইডিং করার। ও শো-আপ চায়নি।’
তিনি বলেন, ‘বিয়ের সময় অনুষ্ঠান করতে পারেনি, কেবল আক্দ হয়েছিল। তবে ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা ছিল। এত দিন পর বিয়ের অনুষ্ঠান করছে, সেখানে সে তার শখ পূরণ করেছে; তাতে অন্যদের সমস্যাটা কী?’
ফারহানার প্রতিবেশী এম. তমাল আহমেদ বলেন, ‘ফারহানার পরিবারটি অনেক আগে থেকেই সংস্কৃতিমনা ও প্রগতিশীল। বাংলাদেশের অভিনয় জগতের তিন নক্ষত্র- সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা তার চাচাতো ফুফু। ফলে সে স্বাধীনচেতা হিসেবে বড় হয়েছে।’
যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে এসএসসি ও ২০১৩ সালে যশোর আব্দুর রাজ্জাক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ফারহানা। এখন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) থেকে এইচআর-এ এমবিএ করছেন তিনি।